বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধাণ ৩টি আদিবাসী সমাজের বর্ষ বরণ উৎসব। এটি তাদের প্রধাণ সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোর একটি। এ উৎসবটি ত্রিপুরাদের কাছে বৈসুব, বৈসু বা বাইসু , মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত। বৈসাবী নামকরনও করা হয়েছে এই তিনটি উৎসবের প্রথম অক্ষর গুলো নিয়ে।
বৈ শব্দটি ত্রিপুরাদের বৈসু থেকে, সা শব্দটি মারমাদের সাংগ্রাই থেকে এবং বি শব্দটি চাকমাদের বিজু থেকে। এই তিন শব্দের সম্মিলিত রূপ হলো 'বৈসাবি'।পাহাড়ে প্রাণের উৎসব বৈসাবি শুরু আজ মঙ্গলবার। বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উপলক্ষে পাহাড়ি মানুষের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব এটি। পুরনো বছরের গ্লানি ভুলে, নতুন বছরকে রাঙিয়ে নিতে পাহাড়ের পাড়া-মহল্লায় তাই বাজছে মিলনের গান। তুরু তুরু তুরু রু বাজি বাজত্তে, পাড়ায় পাড়ায় বেরেবং বেক্কুন মিলিনে, এচ্যে বিজু, বিজু, বিজু... এই পাহাড়ি গানে মুখরিত খাগড়াছড়ি।খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে আজ চাকমাদের ফুল বিজুর মধ্য দিয়ে বৈসাবি উৎসবের সূচনা। ভোরে চাকমারা ফুল সংগ্রহ করে, সেই ফুল দিয়ে নদীতে উপগুপ্ত বুদ্ধের উদ্দেশে পূজা করবে। বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন মূলত বিজু উদযাপন করা হয়। নদীতে ফুল দিয়ে পূজা করাই বিজুর প্রধান আকর্ষণ। এ ছাড়া চৈত্রসংক্রান্তির দিন থেকে ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসব। গরয়া নৃত্য হলো বৈসুর মূল আকর্ষণ। মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব শুরু হয় বাংলা নববর্ষের দিন থেকে। মারমাদের জলকেলি (পানি) উৎসব সাংগ্রাইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক।শরণার্থীবিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইগ্রু চৌধুরী পৃথক বাণীতে খাগড়াছড়িবাসীর প্রতি বৈসাবির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।বৈসাবি উৎসব উপলক্ষে আজ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে। এটি জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে টাউন হল প্রাঙ্গণে এসে শেষ হবে।বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সাবেক অতিরিক্ত সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা এর উদ্বোধন করবেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সৌখিন চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, ঝর্ণা চাকমা এবং এম এন লারমা ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা।এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। ১৬ এপ্রিল রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়ায় সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বৈসাবি।বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ বা ১লা বৈশাখই হচ্ছে একমাত্র অসাম্প্রদায়িক জাতীয় উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরীব নির্বিশেষে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এইদিন প্রাণের উদ্দীপনায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনন্দে মেতে উঠে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে। পুরাতন বছরের সমস্ত জীর্ণতা ও ব্যর্থতাকে প্রাণের উচ্ছাসে ভাসিয়ে দিয়ে বাঙালী এইদিন নতুন বছরকে বরণ করে নেয় নতুন করে বাঁচার অঙ্গীকারে। দিন যতই যাচ্ছে বাঙালীর বর্ষবরণ ততই নতুন আঙ্গিকতায় প্রকাশ পাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। বাঙালীর এই চিরায়ত সংস্কৃতির মধ্যেও ভিন্নতা দেখা যায়। তার কারণ, বাংলাদেশে রয়েছে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর বাস। এরা সবাই নিজস্ব ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ১লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ পালন করে থাকে। কিন্তু প্রাণের উচ্ছাস বা উদ্দীপনা সব ক্ষেত্রে এক, ভিন্নতা কেবল আনুষ্ঠানিকতায়।
ত্রিপুরা আধিবাসীদের বৈশাখ উৎসবের নাম বৈশুখ (Boisuk)
মারমাদের বৈশাখ উৎসবের নাম সাংগ্রাই (Sangrai) ও
চাকমাদের বৈশাখ উৎসবরে নাম বিজু (Biju or Bizu) ।
বৈসাবি উৎসবে রান্না হয় মূলত আদিবাসীদের প্রধান ও জনপ্রিয় খাবার 'গণত্মক বা পাচন', এ খাবার সবার ঘরে রান্না হয়। এর পাশাপাশি নানা ধরনের পিঠা, সেমাই, মুড়ি-চানাচুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও ঠাণ্ডা পানীয়র আয়োজন করা হয়। মিশ্র শাকসবজি রান্না হয় মূলত ২৫ থেকে ৩০ ধরনের সবজির সংমিশ্রণে।অনন্য উপায়ে বর্ষবরণ করতে চাইলে ঘুরে আসতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম। বৈসাবি উৎসব উপভোগ করার সুযোগ থাকবে আগামী বেশ কয়েকটি দিন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী বাস বা ট্রেনে চড়ে যেতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বাস রুটে এসি চেয়ার কোচ এবং নন-এসি চেয়ার কোচ উভয়ই পাওয়া যায়। ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে চাইলে কমলাপুর অথবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর সোনার বাংলা, মহানগর প্রভাতী, চট্টলা এক্সপ্রেস, সুবর্ণা এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস ও তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে যাত্রা করতে পারেন।
অনন্য উপায়ে বর্ষবরণ করতে চাইলে ঘুরে আসতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম। বৈসাবি উৎসব উপভোগ করার সুযোগ থাকবে আগামী বেশ কয়েকটি দিন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী বাস বা ট্রেনে চড়ে যেতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বাস রুটে এসি চেয়ার কোচ এবং নন-এসি চেয়ার কোচ উভয়ই পাওয়া যায়। ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে চাইলে কমলাপুর অথবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর সোনার বাংলা, মহানগর প্রভাতী, চট্টলা এক্সপ্রেস, সুবর্ণা এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস ও তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে যাত্রা করতে পারেন।