হলেন মেডিকেলে দেশসেরা স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার"

 


ছোটবেলা থেকেই ভালো ছাত্রী। পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় উপজেলায় প্রথম হয়েছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছেন জিপিএ-৫। স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবেন। তবে মায়ের স্বপ্ন ছিল ভিন্ন। মায়ের ইচ্ছা তার মেয়ে একদিন ভালো চিকিৎসক হবেন। মায়ের স্বপ্নকে প্রাধান্য দিয়ে তিন মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন মীম। নিজের প্রচেষ্টা, মা-বাবার দোয়া ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা হয়েছেন তিনি।মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন তিনি। খুলনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছিলেন মীম। লিখিত পরীক্ষায় ৯২ দশমিক ৫ নম্বর পেয়েছেন। সবমিলিয়ে তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ২৯২ দশমিক ৫। দুই বোনের মধ্যে মীম ছোট। তার বাবা মোসলেম উদ্দীন সরদার ডুমুরিয়া কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং মা খাদেজা খাতুন যশোরের কেশবপুর পাজিয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট পদে কর্মরত।এতো বেশি প্রত্যাশা আমার ছিল না। তারপরও আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। এই সফলতার পেছনে প্রথমেই আমার আব্বু-আম্মুর অবদান রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া। খুলনা শহরে এসে থাকি। আব্বু-আম্মু দুজনই চাকরি করেন। এখান থেকে গিয়ে কাজ করতে হয়েছে। আমার জন্য দুইটা বছর প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছে তাদের। বিশেষ করে আমার আম্মুর কথা বলবো। তাকে অনেক কষ্ট করে যশোরের কেশবপুরে যেতে হয় চাকরি করতে। আমার জন্য আম্মু হাসিমুখে সব কষ্ট সহ্য করেছেন। যাতে আমি একটু ভালো করি। আজ তাদের মুখে হাসি দেখতে পারছি। এটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হবো এমন কোনো আশা আমার ছিল না। শুধুমাত্র আম্মুর জন্য ডাক্তারি পড়তে যাওয়া। যেহেতু এতো ভালোভাবে এই জায়গাতে আসতে পেরেছি, সেটা অনেক বেশি ভালো লাগার একটা বিষয়। আমার সাফল্যের জন্য আম্মুর অবদান সবচেয়ে বেশি। পরীক্ষার পর থেকে এখন পর্যন্ত টেনশনে তার মুখে আমি হাসি দেখিনি। যেহেতু আমি পরীক্ষা দিয়ে বলেছিলাম, আমার পরীক্ষা ভালো হয়নি। ডাক্তার সিয়াম ভাইয়া আমাকে লেখাপড়ার বিষয়ে গাইড করেছেন। ছোটবেলা থেকে শিক্ষকদের অবদান অনেক বেশি ছিল। শিক্ষকরা আমাকে অনেক বেশি সাপোর্ট করেছেন। সকলের দোয়ায় আজকে আমার এই অবস্থান। পঞ্চম শ্রেণিতে আমার প্রথম শিক্ষক সামছুর রহমান। তিনি ভাবতেন আমি ভালো কিছু করতে পারব। তার কথা ও মর্যাদা রাখতে পেরেছি, সেটা আমার ভালো লাগার একটা জায়গা।মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মীম বলেন, বুঝে পড়তে হবে। যেটাই পড়তে হবে কনসেপ্টটা ক্লিয়ার করে পড়তে হবে। যেটা আমি করেছি। মেডিকেলে সবাই ভাবে যে, মুখস্ত করতে হবে। কিন্তু মুখস্ত করার চেয়ে জরুরি বুঝে পড়া। আজকে মুখস্ত করছি, কাল আর মনে থাকছে না। এমন হতে পারে। কিন্তু বুঝে পড়লে সফলতা পাওয়া যায়। আমার অনুজদের প্রতি পরামর্শ থাকবে তোমরা যেটুকু পড়বা বুঝে পড়বা, কেন পড়ছো, কী পড়তেছো সেটা বুঝতে হবে।বিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে তিনি বলেন, একজন ভালো ডাক্তার হওয়া, সবার প্রথম ভালো মানুষ হওয়া। যাতে মানুষের সেবা করতে পারি। যেহেতু সেবামূলক পেশায় যাচ্ছি, সেই সেবাটা যেন করতে পারি। মীমের বাবা মোসলেম উদ্দীন সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে গ্রাম থেকে উঠে আসা আমার মেয়ে আজ দেশসেরা হয়েছে। ডুমুরিয়ায় আমার গ্রাম। সেখান থেকে নগরীতে এসে কোচিং করিয়েছি। ডিএমসি স্কলার কোচিংয়ে ডাক্তার সিয়ামের তত্ত্বাবধায়নে সে লেখাপড়া করে। এছাড়া দু-একটি কোচিংয়ে সে পরীক্ষা দিয়েছে। একমাত্র ডিএমসি স্কলার কোচিংয়ের শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় ভালো ফলাফল করেছে।

তিনি বলেন, ছোট্টগ্রাম থেকে এসে শহরে থেকে মেয়ে এতো সুন্দর রেজাল্ট করেছে, এটা আল্লাহর অশেষ রহমত। এই সফলতার পেছনে তার মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। তার মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমার মেয়ে মেডিকেল পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে।

মীমের মা খাদেজা খাতুন বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল দুই মেয়ের একজন ডাক্তার হবে। বড় মেয়ে হতে পারেনি। ছোট মেয়ে মীম ম্যাথ এবং ফিজিক্সে অনেক ভালো। তার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হোক। আমি মোডিফাই করার চেষ্টা করি। কিন্তু তখনও হয়নি। তবে আমার মেডিকেল অফিসার বলেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং করে কী করবে। তার এবং ডা. সিয়াম স্যারের পরামর্শে তাকে কোচিং করানো হয়। তিন মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজ সে প্রথম হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন ধরে রাতে ঘুমাতে পারিনি। আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি যেন মেয়ে ভালো ফলাফল করে। সকলের আশা ছিল মীম ভালো করবে। ভয় করতো যদি পিছলে যায়। আল্লাহ আমার ডাক শুনেছেন। আমার মেয়ে যেন অনেক ভালো মানুষ হতে পারে, সমাজের গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে- এটাই প্রত্যাশা। 


SHARE THIS

Author:

Previous Post
Next Post