ভ্যানচালকের মেয়ে ডাক্তারীতে চান্স পেল ****

 



স্কুলের গণ্ডি না পেরুতেই বিয়ে দেন বড় মেয়েকে। সেই আক্ষেপ আজও তাকে তাড়া করে বেড়ায়। দৃঢ় সংকল্প করেন।নিজের সব কিছুর বিনিময়ে হলেও সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করবেন।  ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেলসাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক আফতাবর রহমানের কথা। স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়ে আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সাত সদস্যদের সংসার তার। পৈতৃক ভিটেমাটি, একটি ভ্যান আর অল্প কিছু চাষাবাদের জমি তার সম্বল। 


আফতাবর রহমান ভ্যান চালিয়ে সংসারের ভরণপোষণের পাশাপাশি সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করছেন। ছেলে মুন্নাকে ভর্তি করিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দ্বিতীয় মেয়ে আলপনা আক্তার ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পেয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। ছোট মেয়ে এইচএসসিতে পড়াশোনা করছে। আলপনার সহপাঠী রুনা আক্তার বলেন, আলপনা আমার বান্ধবী ছোটবেলা থেকেই একসঙ্গে পথচলা আমাদের। সে অনেক মেধাবী তাছাড়া আমাদের বন্ধু-বান্ধবীদের চেয়ে সে ব্যতিক্রম ছিল। তার সফলতায় আমরা সবাই খুশি। আশা করছি সে মানবিক ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে। এই ক্ষুদ্র সফলতায় আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। যে কথাটি না বললেই নয় তাহলো যার অনুপ্রেরণায় আমার এ সফলতা তিনি হলেন আমার বাবা। যিনি সারা দিন ভ্যান চালিয়ে রোজগার করেন। আর আমাকে স্বপ্ন দেখান ডাক্তার হওয়ার। আমাদের পরিবারটি অনেক কষ্ট করে চলে কিন্তু তা বাবা আমাকে এক সেকেন্ডের জন্যও বুঝতে দেইনি। আমরা বুঝতে পারলেও বাবা কোনোভাবে বুঝতে দিতেন না।

আলপনার মা মাজেদা খাতুন বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বপ্ন দেখেছিলাম মেয়েকে ডাক্তার বানাব। আজ তার যাত্রা শুরু হলো। আলপনার বাবা আমার ২৫ শতক আবাদি জমি ছিল। ছেলেকে ভর্তি করার জন্য ৫ শতক বিক্রি করতে হয়। পরে ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করানোর জন্য বাকী ২০ শতক জমিও বিক্রি করতে হয়। এখন ভ্যান আর ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই। তারপরও আমি অনেক খুশি। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তিনি বলেন, ডাক্তারি পড়ালেখার অনেক খরচ। আমি চেষ্টা করব আমার সাধ্যমতো খরচ দেওয়ার। তবে যদি সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়, তাহলে আমার কষ্টটা কম হবে।

সরকারি সুযোগ-সুবিধা আলপনা পাবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যদি আলপনার বাবা চান তাহলে তার পড়াশোনার খরচের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে উপজেলা প্রশাসন।


SHARE THIS

Author:

Previous Post
Next Post